২০১২ কি আমাদের জীবনের শেষ ?(দয়া করে এড়িয়ে যাবেন না )(Part 2)

cafeworld of poradah
আস্সালামুআলাইকুম.. এর পূর্বের লেখার ধারাবাহিকতায় এই লেখাতে থাকবে কিয়ামত (DOOMSDAY) সম্পর্কে সাথে ইমাম মাহদির আগমনের একটি আলামত..
ইমাম মাহদি আসার আরেকটি আলামত হল, রমজান মাসে ২টি গ্রহণ. একটি চন্দ্র গ্রহণ অপরটি সূর্য গ্রহণ. এই আলামত প্রকাশ পেয়েছিল ১৪০১ (১৯৮১) এবং ১৪০২ (১৯৮২) সনে.
কিয়ামতের নিদর্শন   ............
সাহল ইবনে সাদ থেকে বর্ণিত, নবীজী সা. ইরশাদ করেন, শেষ যুগে সংঘটিত হবে ভূমিধ্বস,  বর্ষিত হবে পাথরবৃষ্টি এবং মানবাকৃতিতে আসবে বিকৃতি। বলা হলো, তা কখন হবে হে আল্লাহর রাসূল! নবীজী বললেন:إِذَا ظَهَرَتْ الْمَعَازِفِ وَالْقَيْنَاتِ ‘যখন ব্যাপকহারে প্রকাশ পাবে বাদ্যযন্ত্র ও গায়িকা’  (আলবানী, সহীহ আল জামে)।
অন্য এক বর্ণনায় এসেছে; হুযায়ফা ইবন উসায়ইদ রাযি. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কক্ষ থেকে  উঁকি দিয়ে দেখলেন, আমরা তখন কিয়ামত সংক্রান্ত আলোচনা করছিলাম। তিনি বললেন,দশটি বিষয় প্রকাশিত হওয়ার আগে কিয়ামত সংঘটিত হবে না : ১.পশ্চিম আকাশ থেকে সূর্য উদিত হবে;২.দাজ্জাল ৩. দুখান বা ধুম্রকুণ্ডলি ৪.দাব্বাতুল আরদ (ভূমি থেকে প্রকাশিত বিশেষ প্রাণী) ৫. ইয়াজুজ মা’জুজ ৬. ঈসা ইবনে মারইয়ামের (JESUS-CHRIST) অবতরণ। ৭. (তিনটি ভূমি ধ্বস)প্রাচ্যে ভূমি ধ্বস; ৮.পাশ্চাত্যে ভূমিধ্বস; ৯. জাযীরাতুল আরবে তথা আরব উপদ্বীপে ভূমিধ্বস; (১০) আদন অভ্যন্তর থেকে প্রকাশিত হবে আগুন, যা মানুষকে পরিচালিত করবে  মাহশার তথা জমায়েত হওয়ার ময়দানে। মানুষ যেখানে রাত যাপন করবে আগুন তাদের সাথে সেখানেই থাকবে। মানুষ যেখানে দুপুরে আরাম করবে আগুন সেখানেই তাদেরকে বেষ্টন করে রাখবে, (ইবনে মাজাহ, সহীহ)।
কিয়ামত দিবসের প্রতি কারো বিশ্বাস তখনই পূর্ণাঙ্গ হবে যখন কিয়ামতের আলামতসমূহের প্রতিও বিশ্বাস স্থাপন করা হবে। বেশ কিছু আলামত না দেখা দেয়ার পূর্বে কিয়ামত সংঘটিত হবে না বলে হাদীসে জোর বক্তব্য এসেছে। হুযায়ফা ইবন উসাইদ আল গিফারী রাযি.বলেনعَنْ حُذَيْفَةَ بْنِ أَسِيدٍ الْغِفَارِىِّ قَالَ كُنَّا قُعُودًا نَتَحَدَّثُ فِى ظِلِّ غُرْفَةٍلِرَسُولِ اللَّهِ
صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَذَكَرْنَا السَّاعَةَ فَارْتَفَعَتْ أَصْوَاتُنَا فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ
صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لَنْ تَكُونَ - أَوْ لَنْ تَقُومَ - السَّاعَةُ حَتَّى يَكُونَ قَبْلَهَا عَشْرُآيَاتٍ.  ‘ আমরা নবীজীর একটি কক্ষের  ছায়ায় বসে কিয়ামত সম্পর্কে আলোচনা করছিলাম। একপর্যায়ে আমাদের কথার আওয়াজ  উঁচু হলো, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন- দশটি নিদর্শন প্রকাশ না পাওয়া পর্যন্ত কখনো কিয়ামত সংগঠিত হবে না’ (আবু দাউদ) ।
কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার  বিষয়টি একটি অদৃশ্য বিষয়, গায়েবের পর্দায় আচ্ছাদিত একটি বিষয়। তাই কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার  সুনির্দিষ্ট সময় সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা ছাড়া অন্য কেউ জানে না। তবে কিয়ামত অতি সন্নিকটে এ ব্যাপারে কুরআন ও হাদীসে বহু বহু সুস্পষ্ট বিবরণ উল্লিখিত হয়েছে। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে :
يَسْأَلُونَكَ عَنِ السَّاعَةِ أَيَّانَ مُرْسَاهَا قُلْ إِنَّمَا عِلْمُهَا عِنْدَ رَبِّي لَا يُجَلِّيهَا لِوَقْتِهَا
إِلَّا هُوَ ثَقُلَتْ فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ لَاتَأْتِيكُمْ إِلَّا بَغْتَةً يَسْأَلُونَكَ كَأَنَّكَ
حَفِيٌّ عَنْهَا قُلْ إِنَّمَا عِلْمُهَا عِنْدَ اللَّهِ وَلَكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ.  ‘ তারা তোমাকে জিজ্ঞাসা করে কিয়ামত কখন ঘটবে। বল, এ বিষয়ে জ্ঞান শুধু আমার রবেরই আছে। তিনিই যথাকালে তা প্রকাশ করবেন। তা আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে একটি ভয়ংকর ঘটনা হবে। আকস্মিকভাবে তা  তোমাদের উপর আসবে। তুমি এ বিষয়ে অবহিত মনে করে তারা তোমাকে প্রশ্ন করে। বল, এই বিষয়ে জ্ঞান শুধু আল্লাহরই আছে। কিন্তু অধিকাংশ লোক জানে না’ ( সূরা আল আ’রাফ: ১৮৭)।
অন্য এক আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন :  يَسْأَلُكَ النَّاسُ عَنِ السَّاعَةِ قُلْ إِنَّمَا عِلْمُهَا عِنْدَ اللَّهِ وَمَا يُدْرِيكَ لَعَلَّ السَّاعَةَ تَكُونُ قَرِيبًا  ‘লোকেরা তোমাকে কিয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। বল, ‘এ বিষয়ের জ্ঞান কেবল আল্লাহর নিকটই আছে, আর তোমার কি জানা আছে, কিয়ামত হয়ত খুব নিকটে!’ ( আল আহযাব:৬৩)।
অন্য এক আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন   : يَسْأَلُونَكَ عَنِ السَّاعَةِ أَيَّانَ مُرْسَاهَا. فِيمَ أَنْتَ مِنْ ذِكْرَاهَا. إِلَى رَبِّكَ مُنْتَهَاهَا  ‘তারা তোমাকে জিজ্ঞেস করে কিয়ামত সম্পর্কে তা কখন ঘটবে’ (আন-নাযিআত:৪২)
কিয়ামত কায়েম হওয়ার সুনির্দিষ্ট সময়ের ব্যাপারে স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকেও আল্লাহ তাআলা কোনো তথ্য দেননি। কিয়ামত কবে ঘটবে? জিবরীল আ. নবীজীকে এ প্রশ্ন করার পর উত্তরে তিনি বলেছিলেন: مَا الْمَسْؤُوْلُ عَنْهَا بِأَعْلَمَ مِنَ السَّائِلِ‘ জিজ্ঞাসিত ব্যক্তি জিজ্ঞেসকারী থেকে এ বিষয়ে অধিক অবহিত নয়’ (বুখারী)।
ইবনে রজব আল-হাম্বলী বলেন, কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার সময় সম্পর্কে অজ্ঞতার ক্ষেত্রে  সবাই সমান। বিষয়টি শুধু আল্লাহর ইলমেই রয়েছে। কাতাদা রহ. বলেন,‘ কিছু বিষয়ের তথ্য  আল্লাহ তাআলা নিজের কাছে রেখে দিয়েছেন, কাউকে জানাননি, না কোনো নৈকট্যপ্রাপ্ত ফেরেশতাকে, না  কোনো  প্রেরিত নবীকে,‘নিশ্চয় কেয়ামতের জ্ঞান আল্লাহর নিকট’ (সূরা লুকমান:৩৮)। এরপর তিনি বলেন, ‘তাই  কিয়ামত কোন্ বছরে, কোন্ মাসে, রাতে না দিনে সংঘটিত হবে এব্যাপারে কারো কোনো জ্ঞান নেই’।
সাধারণ মানুষ যেমন এ সম্পর্কে অবগত নয়, নবীগণও তেমনি অবগত নন ।
কিয়ামত অতি সন্নিকটে। তবে মানুষ এ ব্যাপারে দুঃখজনকভাবে গাফেল বা উদাসীন।
আল্লাহ তাআলা বলেন : اقْتَرَبَ لِلنَّاسِ حِسَابُهُمْ وَهُمْ فِي غَفْلَةٍ مُعْرِضُونَ ‘মানুষের হিসাব-নিকাশের সময় আসন্ন। কিন্তু তারা উদাসীনতায় মুখ ফিরিয়ে আছে’ (আল আম্বিয়া:১)।
অন্যত্র আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন : أَزِفَتِ الآزِفَةُ ‘কিয়ামত নিকটবর্তী’ (সূরা আন-নাজম:৫৭)।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিয়ামত অত্যাসন্ন হওয়া সম্পর্কে বলেন  بُعِثْتُ أَنَا وَالسَّاعَةَ كَهَاتَيْنِ، وَيَقْرُنُ بَيْنَإِصْبَعَيْهِ السَّبَّابَةِ وَالْوُسْطَى ‘  আমার     প্রেরিত হওয়া ও কিয়ামত এই দু’ আঙ্গুলের ন্যায়,  এই বলে তিনি তাঁর দু’আঙ্গুল তর্জনী ও মধ্যমা একসাথে মিলান’ (বুখারী)।
কিয়ামতের নিদর্শনসমূহ দু’ভাগে বিভক্ত: ১. ছুগরা  বা ছোট নিদর্শন ২. কুবরা বা বড় নিদর্শন। ছোট নিদর্শনগুলো কিয়ামতের দীর্ঘদিন পূর্ব থেকেই প্রকাশ পেতে থাকবে। আর বড়গুলো প্রকাশ পাবে কিয়ামতের অতি নিকটবর্তী সময়ে। যেমন, দাজ্জালের আবির্ভাব।
কিয়ামতের আলামতগুলো প্রকাশ পাওয়া হিসেবে তিন ভাগে বিভক্ত:
১.কিছু আলামত ইতঃপূর্বে প্রকাশ পেয়েছে এবং শেষ হয়ে গিয়েছে,
২. কিছু আলামত প্রকাশিত হয়েছে এবং তা চলমান এবং উত্তরোত্তর বর্ধনশীল।
৩. কিছু আলামত এখনো  প্রকাশ পায়নি।
আলামতগুলো সবিস্তারে বর্ণনার পূর্বে বলে রাখা ভালো যে, ‘কিয়ামতের আলমত’ বাক্যাংশটি শোনামাত্রই আমাদের মনোজগতে কিছু অযাচিত, হারাম ও নাজায়েয বিষয়ের চিত্র ভেসে ওঠে। বিষয়টি আসলে সেরকম নয়। যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবী হয়ে আবির্ভাব ও তাঁর ওয়াফাত, ইমাম মাহদীর আগমন, ঈসা আ. এর পুনরায় আগমন ইত্যাদি অযাচিত কোনো বিষয় নয়, তেমনিভাবে মানুষের সম্পদ বেড়ে যাওয়া নাজায়েয কোনো বিষয় নয়, তবে এগুলো পৃথিবীর বয়সের বার্ধ্যকালের আলামত।
কিয়ামতের যেসব আলামত প্রকাশ পেয়েছে ও শেষ হয়ে গিয়েছে তার কয়েকটি নিম্নরূপ : মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবী হয়ে পৃথিবীতে আবির্ভাব কিয়ামতের একটি ছোট আলামত।
হাদীসে এসেছে بُعِثْتُأَنَا وَالسَّاعَةَ كَهَاتَيْنِ وَأَشَارَ بِالسَّبَّابَةِ وَالَّتِيْ تَلِيْهَا ‘ আমার প্রেরিত হওয়া ও কিয়ামত এ দু’ আঙ্গুলের ন্যায়, তিনি তর্জনী ও তার পরবর্তী আঙ্গুল (মধ্যমা) দিয়ে ইশারা করলেন’ (বুখারী ও মুসলিম)। মধ্যমা আঙ্গুল তর্জনী থেকে সামান্য বর্ধিত বা লম্বা। তর্জনী  থেকে মধ্যমার মাথা যতটুকু দূরে অবস্থিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের  প্রেরিত হওয়া থেকে কিয়ামত এই পরিমাণ দূরত্বে অবস্থিত। অথবা তর্জনী ও মধ্যমা এ দু’টির মাঝে যেমন দূরত্ব নেই তেমনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের  আবির্ভাব ও কিয়ামতের দিবসে মাঝে দূরত্ব নেই।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওয়াফাত ঘটাও কিয়ামত নিকটবর্তী হওয়ার আলামত। আউফ ইবনে মালেক রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : اُعْدُدْ سِتاً بَيْنَ يَدَيْ السَّاعَةِ مَوْتِيْ…‘আমি কিয়ামতের পূর্বের ছয়টি নিদর্শন গুণছি, (তন্মধ্যে প্রথমটি হলো) আমার মৃত্যু’ (বুখারী)।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওয়াফাতের সাথে সাথে আকাশ থেকে ওহী নাযিলের চিরসমাপ্তি ঘটে। হাদীসে এসেছে: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওয়াফাতের পর আবূ বকর ও উমর রাযি. উম্মে আয়মান রাযি. কে দেখতে গেলে তাঁকে ক্রন্দনরত পান।
 : مَا يُبْكِيْكَ؟ مَا عِنْدَ اللهِ خَيْرٌ لِرَسُوْلِهِ . فَقَالَتْ : مَاأَبْكِيْ أَن لَّا أَكْوْنَ أَعْلَمُ أَن مَا
عِنْدَ اللهِ خَيْرٌ لِرَسُوْلِهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، وَلَكِنِّيْ أَبْكِيْ أَنَّ الْوَحْيَ قَدْ انْقَطَعَ مِنَ السَّمَاءِ . فَهَيَّجَتْهُمَا
عَلَى الْبُكَاءِ ، فَجَعَلَا يَبْكِيَانِ مَعَهَا.
তাঁরা বললেন, “আপনি কাঁদছেন কেন? আল্লাহর কাছে যা আছে তাতো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্য সর্বোত্তম। উম্মে আয়মান রাযি. বললেন,‘আল্লাহর কাছে যা আছে তা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্য সর্বোত্তম’ এটার জ্ঞান না থাকার দরুন আমি কাঁদছি না। বরং আমি এ জন্য কাঁদছি যে আকাশ থেকে ওহী নাযিল হওয়া বন্ধ হয়ে গেল’। একথা বলে তিনি আবূ বকর ও উমর রাযি. এর ক্রন্দনকে জাগিয়ে তুললেন। অতঃপর তাঁরা উভয়েই উম্মে আয়মানের সাথে কাঁদতে লাগলেন’ (মুসলিম)।
চাঁদ দ্বিখণ্ডিত হওয়া কিয়ামতের একটি ছোট আলামত, যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবদ্দশাতেই সম্পন্ন হয়েছে। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে : اقْتَرَبَتِ السَّاعَةُ وَانْشَقَّ الْقَمَرُ ‘কিয়ামত নিকটবর্তী হয়েছে এবং চাঁদ বিদীর্ণ হয়েছে’ (সূরা আল কামার:১)।
বায়তুল মাকদেসের বিজয় সংঘটিত হওয়া কিয়ামতের একটি আলামত। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: ‘আমি কিয়ামতের সম্মুখবর্তী ছয়টি বিষয় গুনছি। ( তন্মধ্যে তিনি উল্লেখ করেন) ‘বায়তুল মাকদেস বিজয়’ (বুখারী)। উমর রাযি. এর যুগে ১৬ হিজরীতে বায়তুল মাকদিসের বিজয় সম্পন্ন হয়।
আমওয়াস নামক মহামারী কিয়ামত নিকটবর্তী হওয়ার ছোট একটি আলামত। আমওয়াস ফিলিস্তিনের একটি শহর। প্রসিদ্ধ বর্ণনা মতে ১৮ হিজরীতে উক্ত এলাকায় ব্যাপক মহামারী দেখা দেয়। এতে বহু সাহাবী মৃত্যুবরণ করেন। বুখারীতে বর্ণিত যে ছয়টি আলামত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গুনেছেন তন্মধ্যে একটি হলো এই আমওয়াস মহামারী। এ মহামারীতে ২৫ হাজার মুসলমান মৃত্যুবরণ করেন।
সম্পদ বেড়ে যাওয়া এবং দান-সাদকা নেয়ার লোক না থাকা কিয়ামতের একটি আলামত।  আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত এক হাদীসে এসেছে  : لَا تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى يَكْثُرَ فِيكُمُ الْمَالُ فَيَفِيضَ، حَتَّى يُهِمَّ رَبَّ الْمَالِ مَنْ يَقْبَلُ
صَدَقَتَهُ، وَحَتَّى يَعْرِضَهُ، فَيَقُولَ الَّذِي يَعْرِضُهُ عَلَيْهِ لَا أَرَبَ لِيْ ‘ কিয়ামত কায়েম হবে না যতক্ষণ না তোমাদের মধ্যে সম্পদের আধিক্য দেখা দেয়। সম্পদ উপচে পড়বে, এমনকি সম্পদের মালিক, কে তার কাছ থেকে দান গ্রহণ করবে, তা নিয়ে চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়বে। সে তার সম্পদ পেশ করবে। অতঃপর যার কাছে পেশ করবে সে বলবে : এতে আমার প্রয়োজন নেই’ (বুখারী)। উমর ইবনে আব্দুল আযীয রহ. এর যুগে মুসলমানদের সম্পদ ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়, এমনকি সাদকা গ্রহণ করার মতো মানুষ খুঁজে পাওয়া  যেত না। শেষ যুগেও সম্পদ বেড়ে যাবে। বিশেষ করে ইমাম মাহদী ও ঈসা আ. এর শাসনকালে। যখন যমীন তার গর্ভে থাকা সম্পদ বের করে দেবে স্বর্ণ রূপার পিলার আকারে।
নানা প্রকৃতির ফেতনা প্রকাশ পাওয়া  কিয়ামতের একটি আলামত। হাদীসে এসেছে। ‘কিয়ামতের পূর্বে বড় বড় ফেতনা প্রকাশ পাবে। মুমিন লোক বলবে, এবার আর রক্ষা নেই। অতঃপর তা দূরীভূত  হয়ে অন্য আরেকটি প্রকাশ পাবে। মুমিন বলবে, এটি এটি অর্থাৎ এটিতে আমার ধ্বংস। কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এভাবে ফেতনা প্রকাশ পেতে থাকবে। إِنِ بَيْنَ يَدَيِ السَّا
عَةِ فِتَناً كَقِطَعِ اللَّيْلِ الْمُظْلِمِ ، يُصْبِحُ الرَّجُلُ فِيْهَا مُؤْمِناً
وَيُمْسِيْ كَافِراً، وَيُمْسِيْ مُؤْمِناً وَيُصْبِحُ كَافِرا.ً কিয়ামতের পূর্বে আঁধার রাতের টুকরোর ন্যায় ফেতনা আসবে। যখন মানুষ মুমিন হয়ে সকাল অতিবাহিত করবে এবং সন্ধ্যায় সে কাফির হয়ে যাবে। আবার মুমিন অবস্থায় সন্ধ্যা অতিবাহিত করবে এবং সকাল বেলায় কাফির হয়ে যাবে’।
হিজায  থেকে বিশাল আগুন বের হওয়া: হাদীসে এসেছে, নবীজী ইরশাদ করেন: لَا تَقُوْمُ السَّاعَةُ حَتَّى تَخْرُجَ نَارْ مِنْ أَرْضِ الْحِجَازِ تُضِيْئُ  أَعْنَاقَ الْإِبِلِ بِبُصْرَى‘ কিয়ামত ততদিন পর্যন্ত সংঘটিত হবে না যতদিন না হিজায (অরব উপদ্বীপ) থেকে অগ্নিশিখা বের হবে যাতে বুসরা এলাকায় অবস্থিত উটের ঘাড় আলোকিত হবে’ (বুখারী(
এটি প্রকাশ পেয়েছিল ৬৫৪ হিজরী সনে। যা ছিল অত্যন্ত ভয়াবহ। সে সময়ের ও পরবর্তী যুগের উলামায়ে কেরাম তাদের লেখায় সে আগুনের বিবরণ দিয়েছেন।
আমানতদারী বিলুপ্ত হওয়া কিয়ামতের একটি আলামত: আবূ হুরায়রা রাযি. বর্ণনা করেন, নবীজী সা. ইরশাদ করেন:  إِذَا ضُيِّعَتِ الْأَمَانَةُ فَانْتَظِرُوَا السَّاعَةَ ‘ যখন আমানতের খিয়ানত করা হবে তখন তোমরা  কিয়ামতের অপেক্ষা করবে’(বুখারী)।
মানব হত্যা বেড়ে যাওয়া কিয়ামতের একটি আলামত: হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: تَقُوْمُ السَّاعَةُ حَتَّى يَكْثَرِ الْهَرْجَ قَالُوْا وَمَا الْهَرْجُ يَارَسُوْلَ اللَّهِ؟ قَالَ: الْقَتْلُ الْقَتْلُ لا
‘ কিয়ামত ততক্ষণ সংঘটিত হবে না যতক্ষণ না হারাজ বেশী হবে। সাহাবায়ে কিরাম জিজ্ঞাসা করলেন ‘হারাজ’ কী হে আল্লাহর রাসূল? তিনি বললেন হত্যা, হত্যা হত্যা’ (মুসলিম)।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে কিয়ামতের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণের তাওফীক দান করুন।
প্রিয় পাঠক. কিয়ামতের যেসব আলামত পূর্বে শুরু হয়ে এখনো চলছে এবং দিন দিন বেড়েই চলেছে তা হলো, যিনা-ব্যাভিচার,সুদ, গান-বাজনা ও  আকাশ-ছোঁয়া প্রাসাদ নির্মাণে প্রতিযোগিতা ইত্যাদি।
যিনা-ব্যাভিচার বেড়ে যাওয়া সম্পর্কে হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন :
 وَالَّذِي نَفْسِيْ بِيَدِهِ لَا تَفْنَى هَذِهِ الْأُمَّةُ حَتَّى يَقُوْمَ الرَّجُلُ إِلَى الْمَرأَةِ فَيَفْتَرِشَهَا فِي
الطََّرِيْقِ فَيَكُوْنَ خِيَارُهُمْ يَوْمَئِذٍ مَنْ يَقُوْلُ لوَوَارَيَتَهَا وَرَاءَ هَذَا الْحَائِطِ‘
যার হাতে আমার জীবন তার শপথ, এই উম্মত ধ্বংস হবে না যতক্ষণ না তাদের পুরুষ নারীকে রাস্তায় ফেলে জনসমক্ষে ব্যাভিচারে লিপ্ত হবে। সে যুগে যে  উত্তম  ব্যক্তি হবে সে (সাহস) করে বলবে, যদি  মহিলাকে এ দেয়ালের  পেছনে আড়াল করে নিতে! (মুসনাদে আবি ইউলা, সহীহ) ।
সুদ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়া কিয়ামতের একটি আলামত: এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: بَيْنَ يَدَيِ السَّاعَةِ يَظْهَرُ الرِّبَا وَالزِّنَا وَالْخَمْرُ ‘ কিয়ামতের আগে সুদ, ব্যভিচার ও মদ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়বে’ (তাবারানী: আল মুজামুল আওসাত, হাসান)।
বাদ্যযন্ত্র ও গায়িকাদের ব্যাপকতা কিয়ামতের আলামত হওয়া সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
সাহল ইবনে সাদ থেকে বর্ণিত, নবীজী সা. ইরশাদ করেন, শেষ যুগে সংঘটিত হবে ভূমিধ্বস,  বর্ষিত হবে পাথরবৃষ্টি এবং মানবাকৃতিতে আসবে বিকৃতি। বলা হলো, তা কখন হবে হে আল্লাহর রাসূল! নবীজী বললেন:إِذَا ظَهَرَتْ الْمَعَازِفِ وَالْقَيْنَاتِ ‘যখন ব্যাপকহারে প্রকাশ পাবে বাদ্যযন্ত্র ও গায়িকা’  (আলবানী, সহীহ আল জামে)।
উঁচু উঁচু বিল্ডিং নির্মাণে প্রতিযোগিতা কিয়ামতের একটি আলামত। হাদীসে জিবরীল-এ উল্লিখিত হয়েছে: فَأَخْبِرْنِيْعَنْ أَمَارَتِهَا؟ قَالَ أَنْ تَلِدَ الْأَمَةُ رَبَّتَهَا وَأَنْ تَرَى الْحُفَاةَ الْعُرَاةَ الْعَالَةَ رِعَاءَ الْشَّاءِ يَتَطَاوَلُوْنَ فِيْ الْبُنْيَانِ .‘ আমাকে কিয়ামতের আলামত সম্পর্কে অবহিত করুন’! নবীজী বললেন,‘দাসী তার মনিবকে জন্ম দিবে এবং তুমি দেখবে  নগ্নপদ, নগ্ন শরীর, অভাবী,বকরীর পালের রাখালরা প্রতিযোগিতা করবে উঁচু উঁচু বিল্ডিং  নির্মাণ নিয়ে’ (মুসলিম)।
মিথ্যা বেড়ে যাওয়া, এক বাজারের কাছে আরেক বাজার কায়েম হওয়া ইত্যাদিকেও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিয়ামতের আলামত হিসেবে উল্লেখ করেছেন। আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন : لَا تَقُوْمُ السَّاعَةُ حَتَّى تَظْهَرَ الْفِتَنُ وَيَكْثُرَ الْكَذِبُ وَتَتَقَارَبَ الْأَسْوَاقُ‘কিয়ামত কায়েম হবে না যতক্ষণ না ফিতনা প্রকাশ পাবে এবং মিথ্যাচার বেড়ে যাবে এবং বাজার হবে কাছাকাছি’ (আহমদ, আলবানী হাদীসটিকে সহীহ আল জামে কিতাবে সহীহ বলেছেন)।
কিয়ামতের বড় আলামতসমূহ
এগুলো কিয়ামতের কিছু আগে ঘটবে.
কিয়ামতের বড় আলামতগুলো হলো- পশ্চিম আকাশ থেকে সূর্যোদয়, দাজ্জালের আবির্ভাব, আকাশ থেকে ধুঁয়া আসা, দাব্বাতুল আরদ বা  ভূমিগর্ভ থেকে একটি বিশেষ প্রাণী বের হয়ে আসা,ইয়াজুজ মা’জুজের বের হওয়া, ঈসা ইবনে মারয়াম আ. এর পুনঃআগমন, তিনটি ভূমিধ্বস, অগ্নি প্রকাশ পাওয়া ইত্যাদি।  কুরআনুল কারীম ও সহীহ হাদীসে এবিষয়ে বিস্তারিত বর্ণনা এসেছে।
ইয়াজুজ মাজুজ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা  ইরশাদ করেন : حَتَّى إِذَا فُتِحَتْ يَأْجُوجُ وَمَأْجُوجُ وَهُمْ مِنْ كُلِّ حَدَبٍ يَنْسِلُونَ ‘এমন কি যখন ই’য়াজুজ মা’জুজকে উন্মুক্ত করে দেয়া হবে এবং তারা প্রতি উচ্চ ভূমি থেকে ছুটে আসবে’ (সূরা আল আম্বিয়া:৯৬)।
ভূমিগর্ভ থেকে প্রাণী বের হয়ে আসা এবং মানুষের সাথে কথা বলা সম্পর্কে আল কুরআনে এসেছে  : وَإِذَا وَقَعَ الْقَوْلُعَلَيْهِمْ أَخْرَجْنَا لَهُمْ دَابَّةً مِنَ الْأَرْضِ تُكَلِّمُهُمْ أَنَّ النَّاسَ كَانُوا بِآَيَاتِنَا لَا يُوقِنُونَ  ‘ যখন ঘোষিত শাস্তি তাদের নিকট আসবে তখন আমি মৃত্তিকাগর্ভ থেকে বের করব এক প্রাণী, যা তাদের সাথে কথা বলবে, এজন্য যে মানুষ আমার নিদর্শনে অবিশ্বাসী’ (সূরা আন নমল:৮২)।
এ সময়ে তওবার দরজা বন্ধ হয়ে যাবে .
প্রিয় মুসল্লিয়ানে কিরাম!এই নশ্বর জগত ধ্বংসের সময় সন্নিকটে। কিয়ামতের ছোট ছোট আলামতসমূহ প্রকাশিত হয়েছে এবং তার অনেকগুলোই  বর্তমানে আমরা প্রকট  আকারে দেখতে পাচ্ছি।  ছোট আলামতসমূহ বড় আলামতের ইঙ্গিতবাহী। ছোট নিদর্শন দেখা যাচ্ছে বড় আলামত সন্নিকটে | তাই আমাদের সতর্ক হওয়া উচিত। নেক আমলের প্রতি আগ্রহী হওয়া উচিত। বর্তমান যুগের নানাবিধ ফিতনা থেকে বেঁচে থাকার জন্য জানপ্রাণ চেষ্টা করা উচিত। পরিবার-পরিজন, পাড়া -প্রতিবেশী, দেশবাসী সবাইকে নেক-আমলের প্রতি উদ্বুদ্ধ করা উচিত। আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাওফীক দান করুন।
                                                         ….আমিন….
           (JESUS-CHRIST, MOSES,  MUHAMMAD all prophets (pbut) are  brothers In FAITH)

To know more about 2012 and Islam ,visit – Blog

To know more about Mayan and 2012 ,visit -Website

No comments:

DIGITAL OF PORADAH